‘অবৈধ’ বাঙালিদের নিয়ে নতুন চিন্তা আসামে

‘অবৈধ’ বাঙালিদের নিয়ে নতুন চিন্তা আসামে

ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে কথিত অবৈধ বাঙালিদের বৈধভাবে কাজের সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে রাজ্যগুলো। গত সপ্তাহেই দিল্লির সঙ্গে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন তারা। বিশেষ করে আসামে কথিত ‘অবৈধদের’ তালিকা করা নিয়ে উত্তাল পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যটি।

সেখানকার কংগ্রেসসহ কয়েকটি আঞ্চলিক দলও এটিকে বিজেপির ঘৃণ্য রাজনীতি বলে অভিহিত করেছে। এমনকি তাদের সে তালিকা থেকে রেহাই পাচ্ছে না আসামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও।

পূর্বাঞ্চলীয় সূত্রগুলো বলছে, আসামে জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে। আর ‘যেমন খুশি তেমন ভাবে’ করা তালিকায় বেশ কয়েক লাখ মানুষের বাদ পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আর তাদের বেশির ভাগই বাঙালি মুসলিম।

ইতিমধ্যে করা সে খসড়া তালিকায় ১ কোটি ৯০ লাখ লোকের নাম ঠাঁই পেয়েছে। বাদ পড়েছেন রাজ্যের অনেক আদি বাসিন্দাও। এমনকি রাজ্যের চার বিধায়কসহ সাবেক মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিকেরা রয়েছেন বাদের তালিকায়।

বাদ পড়া বিশিষ্টজনদের মধ্যে রয়েছেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য, আসাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গ-এর মালিক-সম্পাদক তৈমুর রাজা চৌধুরী প্রমুখ।

আসাম রাজ্য সরকার বাদ পড়াদের অবৈধ বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করলেও তারা বলছেন তারা সেখানকারই স্থানীয়। আর বাংলাদেশি যারা রয়েছেন তাদের ফেরত নিতেও বাংলাদেশ প্রস্তুত নয়।

দুইদেশের মধ্যে কোনো প্রত্যাবাসন চুক্তিও নেই। ফলে এই লাখ লাখ তথাকথিত অবৈধ বিদেশিকে কী করা হবে তা নিয়ে দিল্লির সঙ্গে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর গত সপ্তাহেই বৈঠক করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে।

সে আলোচনায় বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী লাখ লাখ অবৈধ বাংলাদেশিদের বৈধভাবে কাজের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করেছেন। এর মধ্যে একজন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা। তিনি বলছেন, ‘এই ইস্যু অ্যাড্রেস করার জন্য একটা মেকানিজম লাগবেই। ফলে আমরা কেউ ইনার লাইন পারমিট, কেউ ওয়ার্ক পারমিটের কথা বলেছি। অবশ্য প্রতিটা প্রস্তাবেরই নানা সুবিধা-অসুবিধা আছে। কিন্তু এটা যে উপেক্ষা করা যাবে না তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।’

বিষয়টি মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা দরকার বলেও মনে করছেন মেঘালয়ের মূখ্যমন্ত্রী। তার মতে, ওই অঞ্চলের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থেই প্রয়োজনে নিয়মকানুনের কিছু পরিবর্তন করেও এই বিপুল সংখ্যক লোককে ওয়ার্ক পারমিট বা এ ধরনের কিছু দেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে।

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোর্ডের সাবেক সদস্য ও বিএসএফের প্রাক্তন মহাপরিচালক প্রকাশ সিংও মনে করছেন, ওয়ার্ক পারমিট হল দুইটি চরম রাস্তার মধ্যে একটা মাঝামাঝি সমাধান।

‘একটা রাস্তা হল এই লোকগুলোকে ছুড়ে ফেলা, যা অবশ্যই নিষ্ঠুর ও মানবাধিকারের দৃষ্টিতে আপত্তিজনক। আর একটা রাস্তা হল ঠিক আছে তোমরা বিদেশি, থাকছ থাক- আমরা কিছুই করলাম না। এটা দেশের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপস করা।’

কিন্তু এই দুইটির মাঝে একটা মধ্যপন্থা হতে পারে বিদেশি হিসেবে এদেশে দুইবছর বা তিন বছর ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ কর, থাকো আর মেয়াদ ফুরোলে ফিরে যাও।

কিন্তু এখানে প্রশ্ন হলো, ওয়ার্ক পারমিটের সময় শেষ হলে তারা যাবে কোথায়?’

আসামের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও অর্থনীতিবিদ জয়দীপ বিশ্বাস বলেন, ‘এই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। প্রস্তাবটা পুরনো। এক সময় প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীও এই ওয়ার্ক পারমিট দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এমনিতে অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য সারা বিশ্বেই ওয়ার্ক পারমিট স্বীকৃত একটি পন্থা। কিন্তু আসামের ব্যাপারটা একেবারেই স্বতন্ত্র।’

জয়দীপের বলেন, ‘৪৭ বছর ধরে যিনি এ রাজ্যে আছেন, যার নাম ভোটার তালিকাতেও আছে, তার নাগরিকত্বের দাবি খারিজ করে দিয়ে হাতে একটা ওয়ার্ক পারমিট ধরিয়ে দিলাম, এটা তো সম্পূর্ণ বেআইনি।’

‘ধরা যাক নাগরিক তালিকা থেকে পাঁচ লাখ মানুষ বাদ পড়লেন। এখন এই পাঁচ লাখ মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হলে তারা কিন্তু রাষ্ট্রহীন নাগরিকেও পরিণত হবেন। বিশ্বের একটি অন্যতম বৃহৎ ও দায়িত্বশীল গণতন্ত্র হিসেবে ভারত কিছুতেই এতগুলো লোককে রাষ্ট্রহীন বানাতে পারে না। সেটা অন্যায়, অনৈতিক ও অবৈধ।’

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment